বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

News Headline :
মানববন্ধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন শ্যামনগরে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সড়কে ভ্যান চালকের মৃত্যু রাজশাহীর মোহনপুরে মদ পানে ৩ জনের মৃত্যু, গ্রেফতার ২ রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র সাতটি থানার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা যানজট নিরসন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে আরএমপি’র মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে এবার কৃষকরা আমন ধানের আশানুরুপ ফলন পেয়েছে পাবনায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ১জন আহত শাজাহানপুরে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে ছাত্রদলের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত মান্দায় বিল উন্মুক্তের দাবিতে জেলেদের সংবাদ সম্মেলন সভাপতির স্বৈরাচারী আচরন স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে পাবনা শহর সমাজ সেবা কার্যালয়ের কার্যক্রম স্থবির

কুড়িগ্রামে নিহত নববধূ সেনা সদস্যর স্ত্রী্র শরীরের ১৭টি আঘাতের চিহ্ন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহ ভাজন আটক-৩

Reading Time: 3 minutes

নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের উলিপুরের পান্ডুল ইউনিয়নে ঘরে ঢুকে এক নববধূকে হত্যার ঘটনার তিন দিনেও হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। নিহত নববধূর শরীরে আঘাতের ধরন দেখে পুলিশ ও পরিবারের লোকজনের ধারণা, এক ধরনের ‘প্রতিশোধ স্পৃহা’ কিংবা ‘ক্ষোভ’ থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। তবে কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ ও নিহতের পরিবার।এর আগে রবিবার (১৩ আগস্ট) সকালে পান্ডুল ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাবার বাড়ির ঘর থেকে রোকাইয়া আক্তার রিংকি (১৮) নামে ওই নববধূর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই গ্রামের এনজিওকর্মী রেজাউল করিমের মেয়ে তিনি। ছয় মাস আগে উলিপুরের মাঝবিল এলাকার বাসিন্দা এক সেনাসদস্যের সঙ্গে বিয়ে হয় রিংকির। এক সপ্তাহ আগে অসুস্থ দাদিকে দেখতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়ি এসেছিলেন। প্রত্যন্ত একটি গ্রামে বসতবাড়ির কক্ষে নববধূকে এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনার পর পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।সুরতহাল প্রতিবেদনে নববধূকে ধর্ষণের কোনও আলামত পায়নি পুলিশ। প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী পুলিশ সদস্য ও পরিবারের নারী সদস্যদের বরাতে জানা গেছে, আঘাতে জর্জরিত করে রিংকির মৃত্যু নিশ্চিত করে হত্যাকারী। তার গলা কেটেই ক্ষান্ত হয়নি, সারা শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অন্তত ১৭টি আঘাত করেছে। ঘাড়ের পাশে অস্ত্র দিয়ে এমনভাবে আঘাত করেছে যা দেখে পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা বলছেন, নৃশংসতা এ ঘটনায় ভীষণ রকম ‘ক্ষোভের’ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।রিংকির চাচাতো ভাই ও প্রতিবেশী সাদেক বলেন, রিংকির শরীরে করা প্রতিটি আঘাতই বলে দেয়, রিংকির প্রতি হত্যাকারীর ভীষণ ক্ষোভ ছিল। কিন্তু কার এত ক্ষোভ ছিল, কেনই-বা এভাবে মেয়েটিকে হত্যা করলো তার কোনও কিনারা আমরা এখনও পাচ্ছি না।’এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর ঘর থেকে নিহতের হাতে লেখা ডায়েরি, কয়েকটি চিঠি ও মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ। নিহত রিংকি কারও ব্যর্থ ও অপূর্ণ প্রেম থেকে ‘ক্ষোভের’ বলি হয়েছেন কিনা সে দিকও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।রিংকির নিকটাত্মীয় ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাতভর ভারী বৃষ্টি চলছিল। রাতের খাওয়া শেষে বাড়ির দক্ষিণ প্রান্তের সেমিপাকা ঘরে একাই ঘুমাতে যান রিংকি। সেদিন বাড়িতে তার বাবা-মা ছিলেন না। তার দাদা-দাদি ও ছোট ভাই বাড়ির আরেক প্রান্তে অন্য ঘরে শুয়ে ছিলেন। রিংকি যে ঘরে ছিলেন সেই ঘরের সঙ্গে বাথরুম সংযুক্ত। বাথরুমটিতে ঘরের ভেতর ও বাইরে থেকে প্রবেশের দরজা রয়েছে। একটি দরজা বাইরে থেকে লাগানো এবং আরেকটি দরজা রুমের ভেতর থেকে লাগানো থাকে। রাতে ভারী বৃষ্টির মধ্যে কোনও এক সময় দক্ষিণ প্রান্তের সীমানার টিনের বেড়ার বাঁধন খুলে বাড়িতে প্রবেশ করে হত্যাকারী। এরপর বাথরুমের বাইরের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এরপর রিংকিকে বিছানার ওপর নৃশংসভাবে হত্যা করে একই পথে বেরিয়ে যায়। তবে হত্যাকারী আগে থেকে রুমে ঢুকে ছিল নাকি পরে ঢুকে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।রিংকির মরদেহের গোসল করানো নারীদের বরাত দিয়ে পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, রিংকির শরীরে ধারালো অস্ত্রের অন্তত ১৭টি আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তারা। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় রিংকি হয়তো চিৎকার করেছিলেন। কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে সে শব্দ কারও কানে পৌঁছায়নি।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন তরুণ থানায়।
এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আসাদুজ্জামান আসিফ, রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মারুফ নামে তিন তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। জব্দকৃত ডায়েরি ও চিঠি এবং প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে তাদের নাম জানতে পারে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, এই তরুণদের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকে যোগাযোগ ছিল নিহত নববধূর। রাকিবুল ও মারুফ পান্ডুল ইউনিয়নের সাতঘড়িপাড়া গ্রামের এবং আসিফ একই ইউনিয়নের সাতকুড়ার পাড় গ্রামের বাসিন্দা।আটক তিন সন্দেহভাজন ব্যাক্তির সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে হত্যাকাণ্ডের পর রাকিবুলকে এলাকা থেকে, আসাদুজ্জামান আসিফকে রংপুর এবং মারুফকে ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে পুলিশ মনে করছে, এই তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রিংকির। এর মধ্যে আসিফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি রিংকির পরিবার জানতো। নিহতের বাড়িতে আসিফের যাতায়াত ছিল। তাদের বিয়ের আলাপও হয়েছিল। তবে আসিফের পরিবার রাজি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। আসিফ দীর্ঘদিন থেকে রংপুরে থেকে পড়াশোনা করেন বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা রয়েছে।
অপর তরুণ রাকিবুল ইসলাম কুড়িগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি পলিটেকটিক ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তিনি এলাকায় নিজ বাড়িতে থাকেন। তবে রিংকির কক্ষে পাওয়া চিঠিতে যে রাকিবুলের নাম লেখা রয়েছে, এই রাকিবুল সেই রাকিবুল কিনা তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।আরেক তরুণ মারুফ সম্পর্কে জড়াতে প্রায়ই রিংকিকে বিরক্ত করতো বলে স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কাজ চলছে বলে উলিপুর থানা সূত্রে জানা গেছে।ওসি গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘নিহতের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছেন। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন তরুণকে থানায় নেওয়া হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

Please Share This Post in Your Social Media

Design & Developed BY Hostitbd.Com